24.10.21 sunday PA EXAM

  গত 24 তারিখ রবিবার আমার জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এই প্রথমবার জিডিএস থেকে  পিএ /এসে পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেলাম।  বাবা এলার্ম দিয়েছিল সাড়ে তিনটে আমার ঘুম ভাঙলো সাড়ে চারটের সময় ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে পড়লাম বাবা সকালে পরোটা তৈরি করল একগাদা, সঙ্গে নিলাম আলুর তরকারি সামান্য কিছু এদিক ওদিক ভাজাভুজি কয়েকটা মিষ্টি।  ঝিনুক খালি স্ট্যান্ড থেকে বাস ধরলাম ভলভো বাস সাড়ে ছটার সময়। 

 এই এত সকালেও বাসে ভালোই ভীড়। তবুও আমরা সিট পেয়ে গেলাম উঠে একটু বই খাতা টা খুলে একটু চোখ বোলানো চেষ্টা করলাম। মোবাইলে কয়েকটা কোশ্চেন ছিল দেখার চেষ্টা করলাম কিন্তু হলো না যা কাঁপছিল মোবাইলে দেখাই দায়।

 পরীক্ষার সিট পড়েছিল সাঁতরাগাছি স্টেশন থেকে সামান্য কিছু দূর হেঁটে গিয়ে জগাছা বিদ্যামন্দিরে জগাছা থানার উল্টোদিকে দশটার সময় পরীক্ষা শুরু 9 টার সময় উপস্থিত হওয়ার সময়।

 স্ট্যান্ডে যখন নামলাম তখন প্রায় সাড়ে আটটা বাজে এই সেইখানে কিছুক্ষণ ঘুরে একটু তরকারি খেয়ে সেইখানে একটা দোকানে গিয়ে বাবা চায়ের অর্ডার দিল আর আমরা সেই বেঞ্চিতে বসে রুটি তরকারি খেলাম মিষ্টি খেলাম টিফিন সাল্লাম কিছুক্ষণ রেস্ট নিলাম আমিও একটু বই পত্র চোখ বুলিয়ে নিলাম তারপর ফ্রেশ হয়ে হাটা দিলাম পরীক্ষা সেন্টারে দিকে।

 সেখানে লাইন দিয়ে স্কুলটাই ঢুকতে হচ্ছে আমি কিছুক্ষণ পরে ঢুকলাম কিন্তু আর বেশি দেরি করলাম না সাড়ে নটার দিকে ঢুকে পড়লাম পরীক্ষা সেন্টারে। গিয়ে যে পরীক্ষার হলে আমার সীট পড়েছিল সেখানে গিয়ে দেখলাম তখন আমি প্রথমজন। দুজন গার্ড তখন সেখানে বসে আছেন।

 সত্যি বলতে প্রস্তুতি মোটামুটি নিয়েছিলাম সন্তোষজনক আর প্রথমবার দীর্ঘ 6 বছর পরে প্রথমবার PA পরীক্ষা একটু এক্সাইটেড অনুভব করছিলাম।

 কিন্তু পরীক্ষা হল কড়া। যা কোশ্চেন পড়েছিল কোশ্চেন ভালোই টাফ ছিল আমি তো কয়েকটা কোশ্চেন যেগুলো জানা ছিল না সেগুলো পরে করব বলে রেখে দিয়ে যেটা আমার শক্তিশালী পয়েন্ট গণিত আর রিজিনিং অংশটা সেটা মাথা ঠান্ডা করে পুরো কমপ্লিট করলাম। গণিত সম্ভবত একটা কি দুটো ভুল হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক করে আবার প্রথম থেকে পোস্টাল অংশগুলো ধরলাম। 

 কিন্তু দুঃখের কথা হচ্ছে যেগুলো পরে করব বলে রেখেছিলাম অর্থাৎ যেগুলো আন্দাজে মারবো বলে রেখেছিলাম তার মধ্যে শেষমেশ সময়ের অভাবের কারণে প্রায় 10 থেকে 12 টা টাচ করতে পারলাম না এটা খুব দুঃখের ব্যাপার হয়ে গেল সবগুলো টাচ করে দিয়ে আসা দরকার ছিল যেভাবে হোক আন্দাজে হলেও সবগুলো টাচ করা একান্ত দরকার ছিল এত বড় একটা পরীক্ষায় এবং এরকম কঠিন একটা পরীক্ষায়।

 যাইহোক  পরীক্ষা শেষের পরে আমাদের গার্ড যিনি ছিলেন সম্ভবত বাঁকুড়ার এ.এসপি (সাইন করার সময় দেখলাম) তো উনাকে বললাম ম্যাডাম পরীক্ষা তো ভালোই করা দিয়েছে মোটামুটি প্রস্তুতি নিয়েছিলাম কিন্তু কোশ্চেন তো ভালই কাটছিল  । শুনলেন কিন্তু কিছু বললেন না যাইহোক 15 মিনিট এরপরে ব্রেক দিয়ে আবার পরীক্ষার সেকেন্ড ফেজ আরম্ভ হল যেটা শুধুমাত্র কোয়ালিফাইং পরীক্ষা বাংলার ইংরেজির কয়েকটা কোশ্চেন পড়বে সেগুলো 45 মিনিটের পরীক্ষার কোশ্চেন থাকে কোন কিছুই নয় সবাই হাসতে হাসতে পরীক্ষা দিয়ে দিল কোন সমস্যা নেই।

 যাই হোক পরীক্ষা শেষে বেরিয়ে দেখলাম বাবা সেখানে দাঁড়িয়ে আছে বেরিয়েই একদম জোরজার হাঁটা শুরু করলাম হাঁটতে হাঁটতেই মা বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম যে মা কোথায় বাবা বলল ক্যান্টিন গিয়েছিল মালপত্র করে মাকে স্ট্যান্ডে রেখে দিয়েছে আমরা সেখানে গিয়ে বাস ধরে পুরো ঘর। 

 স্ট্যান্ডে এসে কিন্তু বাবা বলল ভাত খেয়ে গেলে বোধহয় ভাল হত সেই মতো আবার ওইখানে স্ট্যান্ডের কাছে একটা ছোট গুমটি হোটেলে ঢুকে গেল অন্ধকারাচ্ছন্ন গুমটি হোটেল। 

 দু-তিনজন মত খাচ্ছিল কিন্তু আমাদেরকে একদম সামান্য পরিমাণ কিছু ভাত আর তরকারি দিয়েই হোটেল মালিক ঘোষণা করে দিল আর ভাত নেই তরকারিও শেষের পথে দুগাল ভাত মুখে  দিয়ে বললাম আরেকটু তরকারী দিন বলল না আর দেওয়া যাবে না সামান্য একটা চামচের মতো চা-চামচ ঝোল তরকারি ও শেষ ওই সামান্য মাছের ঝোল আর অল্প একটু খানি আলু আর সোয়াবিনের তরকারি। আলু আর সোয়াবিনের তরকারি তে 3 পিস আলু আর এক পিস সোয়াবিন ছিল বাকি সবই ঝোল।

 ভাত আর তরকারি খেয়ে মেজাজটা যেন আরো খিঁচড়ে গেল যাই হোক দুজন মিলে একসাথে গিয়ে বাবা মার সাথে যখন ফিরলাম তখন হালকা হালকা মেঘ করেছে। মার সঙ্গে দুটো কথা বলব এমন সময় হুড়মুড় করে একটা ভিড়ওয়ালা বাস আসতেই বাবা জিজ্ঞেস করল কন্টাকটার কে সিট আছে সেও বললো হ্যা ঠিক আছে দাদা উঠে পড়ুন। আর বাবা ওমনি মালপত্র টেনেহিঁচড়ে আমাদেরকে নিয়ে বাসে উঠে পড়ল। 

 বাসে তখন মিনিমাম 10 থেকে 12 জন লোক দাঁড়িয়ে ছিল আর প্রত্যেকটা সিট ভর্তি আর এদিকে বাবার হাতে পুরো মালপত্র লাগেজ আর আমরা দুজন সারাদিন ক্লান্ত হয়ে তখন আমি বাবার উপরে রাগারাগি করছি মার সঙ্গে আর বাবা আমার সঙ্গে তর্ক জুড়ে দিচ্ছে যে এরপর দেরি হলে আর কোন বাস পাওয়া যাবে না। 

 যাইহোক মিনিট কুড়িঁ পরে কন্টাকটার আমাদের তিনজনকেই সেট করে দিল আবার  আবার আমার সিটটা কন্টাকটারের ঠিক পেছনে সেখানে বসতে গিয়ে মাথাটা আবার সামনে ঠুকে গেল আবার দু তিনবার সিট চেঞ্জ করে করে বহুকষ্টে দুজন একটা উইন্ডো সিট্ পেলাম আর বাবা কোথায় একটা ভিড়ের মধ্যে ঢুকে বসে থাকল। 

 দু'তিনবার ঢুলুনি হল তবুও মোটামুটি ইয়ে করে কোনোমতে গরমে ঘামের সেদ্ধ হতে হতে মেছেদাতে এসে দুজন একটু এগরোল খেলাম তারপর একদম বাড়ি ফিরে ঝিনুকখালি টেনে নামিয়ে দিল। বাবাকে বললাম বাসকে বলতে যে একটু যেন এগিয়ে দিয়ে একদম মোড়ের মাথায় নামায় কিন্তু বাবা বলেনি। তো আবার সেখান থেকে টোটো ভাড়া করে বাড়িতে নামলাম 30 টাকা টোটোওয়ালা কে দিয়ে ঘরে ঢুকলাম এই নিয়ে বাবার সঙ্গে আবার একপ্রস্থ রাগারাগি।

 যাইহোক সারাদিন ক্লান্ত তার পরে রাত্রের খাওয়া-দাওয়া কি হয়েছিল মনেও নেই ঢুলতে ঢুলতে আবার ভারত পাকিস্তানের ম্যাচ ছিল ভারত একদম গো হারাহারি পাকিস্তানের কোন উইকেট পড়েনি ভারতের পুরোটাই তুলে দিল আর অর্ধেক খেলা দেখেছিলাম আর দেখিনি ঢুলতে ঢুলতে ঘুমিয়ে গেলাম




Comments

Popular posts from this blog

সোমবার 26.4

20.4.21 মঙ্গলবার